মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩২ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: সুনামগঞ্জের শষ্যভান্ডার হিসাবে খ্যাত জগন্নাথপুর উপজেলার বৃহত্ত হাওর নলূয়া, মই, পিংলা সহ ছোট বড় ১৫ টি হাওরে ধান কাটা শুরু হয়েছে। তবে এবার ফলন ভাল না হওয়ায় কৃষকের আনন্দে ভাটা পড়েছে। ধানে চিটা ও ঝড় শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন হাওর পাড়ের কৃষকরা। উঠতি বোরো ধানে এ বিপর্যয়ে এখন দিশেহারা কৃষক। হাওরের ধানে ছুচা (চিটা) ২৮, ৫৮ ধান এবার চিটা হওয়াতে কৃষকের মধ্যে হতশা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে শক্তি, হীরা ধান, ২৯ যারা করেছেন তাদের ধান ভাল হয়েছে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন। তবে কৃষকরা বলেছেন হাওরের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় সময় মত পানি দিতে না পারায় এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে ফসলের মধ্যে। অন্যদিকে কৃষি বিশেজ্ঞরা জানিয়েছেন বোর ফসলে সময় মতো সুষ্ঠু পরিচর্যার অভাবে ধানে চিটা হয়ে থাকতে পারে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শওকত ওসমান মজুমদার যুগান্তরকে জানান, এবার আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে কোল্ড ইনজুরির ফলে ধানের উপর প্রভাব পড়েছে। তাই আগে যারা ধান লাগিয়েছেন সেই ধান গুলাই চিটা হয়েছে। বিশেষ করে ২৮ ও ৫৮ ধান চিটা হয়েছে। হাইব্রিড ধান, শক্তি, হীরা, সুপ্রিম ও ২৯ ধানের ফলন ভাল হয়েছে। তিনি বলেন হাওরের ৫০% ধান পেকে গেছে। পিংলা, নলূয়া ও মই হাওরে বড় সাইনবোর্ড সাটিয়ে দিয়েছি। যাতে কৃষকরা দ্রুত পাকা ধান কেটে ঘরে তুলে নেন। ভবানীপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল কাইয়ুম বলেন, আমি ১২ কেদার (৩০ শতকে ১ কেদার) করেছি। আমার জমির অধিকাংশ ধানই চুছা হয়েগেছে। ঋণ করে জমি করেছিলাম এখন খুবই হতাশার মধ্যে আছি। জগন্নাথপুর গ্রামের শফিক আহমদ বলেন, আমি পিংলার হাওরে ৫ কেদার জমিতে ৫৮ ধান লাগিয়েছিলাম ৪ কেদার জমির ধান চুছা হয়ে গেছে। তাই এখন খুবই টেনশনে আছি। এ ধরনের অনেক কৃষকেই ফলন ভাল না হওয়ায় হতাশার কথা বলেছেন। আবার ২৯, শক্তি,সুপ্রিম, হীরা ধান যারা সময় মতো লাগিয়েছেন তাদের ফলন ভাল হয়েছে।
এবার নলূয়া, মই, পিংলা সহ ছোট বড় ১৫ টি হাওরে প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ফসল আবাদ করা হয়েছে।
এদিকে কৃষকরা জানান, জগন্নাথপুর হচ্ছে বৃষ্টি প্রবণ এলাকা। প্রতি বছর বৈশাখ মাস আসার আগেই ভারী বৃষ্টিপাতে জমিতে পানি জমে ধান তলিয়ে যায়। আবার অনেক সময় বেড়িবাধ ভেঙে হাওর তলিয়ে যায়। যে কারণে অত্র অঞ্চলের কৃষকরা ব্রি-২৮ জাতের ধান বেশি চাষাবাদ করে থাকেন। তবে এবার ব্রি-২৮ জাতের ধানে প্রথমে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে জমির পাকা-আধা পাকা ধান নষ্ট হয়ে যায়। এর মধ্যে গত কয়েক দিন আগে শিলাবৃষ্টিতে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। যেখানে প্রতি কেদারে ১৫ থেকে ২০ মণ ধান পাওয়ার কথা ছিল, বর্তমানে ৪ থেকে ৫ মণ ধান হবে। এমন অবস্থায় শ্রমিকরা ধান কাটতে চায় না। আবার টাকা দিয়ে ধান কাটালেও এ পরিমাণ ধান পাওয়া যাবে না। এমতাবস্থায় জমিতে নষ্ট হওয়া পাকা ধান থাকলেও অনেক গৃহস্থরা ধান কাটাতে চাইছেন না। এর মধ্যে যেসব কৃষকদের গবাদি-পশু আছে, শুধু তারাই গবাদি-পশুর খাবারের খড় এর জন্য ধান কাটছেন। যে কারণে অন্য বছর ধান কাটা শুরু হলে কৃষকদের মধ্যে আনন্দ বিরাজ করলেও এ বছর আর নেই। সরজমিনে জগন্নাথপুর উপজেলার বিভিন্ন হাওরে দেখা যায় ধান কাটা শুরু হয়েছে। এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরী করে সরকারিভাবে সহায়তা দিতে তারা সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানান। জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজুল আলম মাসুম বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কৃষি প্রণোদনা দেয়া হবে। এছাড়া দ্রুত মেশিন দিয়ে ধান কাটার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
Leave a Reply